ডায়োড কি?|ইতিহাস | কার্যপ্রণালী |Forward bias | Reverse bias

ডায়োড হল একটি ইলেকট্রনিক ডিভাইস যেটি কেবলমাত্র এক দিকে তড়িৎ প্রবাহ (Current Flow)হতে  সাহায্য করে।  ডায়োড দুই প্রান্ত বিশিষ্ট । যেই প্রান্তে সিলভার কালারের লাইন থাকে এই প্রান্ত টিকে ক্যাথোড বলা হয় । অন্য প্রান্তটি কে অ্যানোড বলা হয়। যেমনটি আমরা আগেই জেনেছি ডায়োড মূলত একটি নির্দিষ্ট দিকে তড়িৎ প্রবাহ হতে সাহায্য করে এবং তার বিপরীত দিকে তড়িৎ প্রবাহকে বাধা দেয় । এই ধরনের একদিকে তড়িৎ প্রবাহ করার প্রবণতাকে রেক্টিফিকেশন বলা হয়।

Diode-Symbol

ডায়োড এর ইতিহাস

উনিশ শতকের শেষের দিকে তড়িৎ প্রবাহ একমুখীকরণ বা রেকটিফিকেশনের দুই ধরনের কৌশল আবষ্কৃত হয়—থার্মায়োনিক ডায়োড(Vacuum Tube) ও অর্ধপরিবাহী ক্রিস্টাল ডায়োড। যদিও ভ্যাকুয়াম টিউব(Vacuum Tube) অর্ধপরিবাহী ক্রিস্টাল ডায়োডের পূর্বে প্রায়োগিক সাফল্য লাভ করে।

১৮৭৩ সালে ফ্রেডিক গাথরি প্রথম থার্মিয়োনিক ডায়োডের মূলনীতি আবিষ্কার করেন। তিনি দেখেন যে ভূমিতে (Ground) সংযুক্ত এক টুকরো সাদা গরম লোহাকে একটি Positive Charge বিশিষ্ট Electroscope এর কাছাকাছি নিয়ে আসা হলে কোন স্পর্শ বা সংযোগ ছাড়াই তা চার্জশূণ্য হয়ে যায়। কিন্তু Electroscope Negative charge দেওয়া হলে প্রক্রিয়াটির পুনরাবৃত্তি ঘটে না। অর্থাৎ এ প্রক্রিয়ায় তড়িৎ প্রবাহ বিভব পার্থক্যের সাপেক্ষে একমুখী।

১৮৮০ সালে বৈদ্যুতিক বাতির ফিলামেন্ট নিয়ে কাজ করার সময় তত্ত্বটি পুনঃআবিষ্কার করেন টমাস আলভা এডিসন। তিনি একটি বদ্ধ বায়ুশূণ্য কাচের পাত্রে একটি কার্বন ফিলামেন্ট ও একটি Positive Charge বিশিষ্ট ধাতব পাত নিয়ে পরীক্ষা চালান এবং দেখতে পান যে ফিলামেন্ট থেকে Vacuum মধ্য দিয়ে চার্জের নির্গমন ঘটছে এবং ধাতব পাতে সঞ্চিত হয়ে তড়িৎ প্রবাহের সৃষ্টি করছে। এডিসনএ ঘটনার নাম দেন এডিসন ইফেক্ট এবং এর উপর ভিত্তি করে Voltage মাপার যন্ত্র Voltmeter তৈরি করেন।

১৮৮৪ সালে এডিসন তার আবিষ্কৃত যন্ত্রটি প্রকাশ্যে নিয়ে আসেন। এর বছর বিশেক পরে মার্কোনি কোম্পানির বিজ্ঞান উপদেষ্টা ও এডিসন কোম্পানির প্রাক্তন কর্মচারী জন এমব্রোস ফ্লেমিং রেডিও সংকেতের মর্মোদ্ধারে এডিসন ইফেক্টের গুরুত্ব অনুধাবন করেন এবং ১৯০৪ সালে ব্রিটেন ও ১৯০৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র থেকে এ ব্যাপারে দুইটি পেটেন্ট লাভ করেন। এ আবিষ্কারের পর থেকে রেকটিফিকেশনের কাজে ভ্যাকুয়াম টিউবের ব্যাপক ব্যবহার শুরু হয়।

পঞ্চাশের দশকে অর্ধপরিবাহী ক্রিস্টাল তৈরির পদ্ধতির উন্নতি ঘটলে যুক্তরাষ্ট্রের বেল ল্যাবে জার্মেনিয়াম-ভিত্তিক ডায়োড তৈরি শুরু হয়, যা ক্রমশ ভ্যাকুয়াম টিউবকে পেছনে ফেলে এগিয়ে যেতে থাকে। বর্তমানে বেশির ভাগ ডায়োড সিলিকন থেকে প্রস্তুত করা হয়, তবে প্রয়োগের উপর নির্ভর করে অন্যান্য অর্ধপরিবাহীও (যেমন জার্মেনিয়াম, সিলিকন কার্বাইড, গ্যালিয়াম যৌগ ইত্যাদি) ব্যবহৃত হয়।

অর্ধপরিবাহী ডায়োড(Semiconductor diode)

বর্তমানে আমরা যে সকল ডায়োড ব্যবহার করি তার অধিকাংশ অর্ধপরিবাহী জাংশন তত্ত্বের উপর নির্ভর করে বানানো হয়। এদের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো P-N Junction ডায়োড। এধরনের ডায়োড অর্ধ পরিবাহীর ক্রিস্টাল যেমন সিলিকন থেকে বানানো হয়। ক্রিস্টালের এক অংশে কিছু অপদ্রব্য মেশানো হয় যাতে এমন একটা জায়গা তৈরি হয় যাতে Negative charge এর বাহক বা ইলেকট্রন অধিক পরিমাণে থাকে; এই অংশকে বলা হয় এন(N)-টাইপ অর্ধপরিবাহী। ক্রিস্টালের অপর অংশে ভিন্নধর্মী অপদ্রব্যের সাহায্যে Positive Charge এর ঘনত্ব বাড়িয়ে তোলা হয়। এ অংশটিকে বলা হয় পি(P)-টাইপ অর্ধপরিবাহী। এই দুইটি অংশের (পি ও এন) সংযোগস্থলকে বলে P-N Junction যেখানে ডায়োডের মূল কাজগুলো হয়ে থাকে। ডায়োডে তড়িৎ প্রবাহের দিক হচ্ছে N Type Semiconductor থেকে P Type Semiconductor দিকে। এর বিপরীত দিকে তড়িৎ প্রবাহিত হতে পারে না।

ডিপলেশন স্তর(Depletion Region)

Depletion Region

একটি P টাইপ Semiconductor এর মধ্যে প্রচুর হোল ও খুবই কম সংখ্যক মুক্ত ইলেক্ট্রন থাকে। আবার N টাইপ Semiconductor ক্ষেত্রে এর বিপরীত অর্থাৎ প্রচুর মুক্ত ইলেক্ট্রন ও খুবই কম সংখ্যক হোল থাকে। যখন একটি P-N জংশন তৈরী করা হয় তখন P অঞ্চল হতে হোলগুলো N অঞ্চলের দিকে এবং N অঞ্চল হতে ইলেকট্রনগুলো P অঞ্চলের দিকে যেতে চেষ্টা করে। এটি একটি ব্যাপন প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে পদার্থকণিকা অধিক ঘনত্বের স্থান থেকে কম ঘনত্বের স্থানে প্রবাহিত হতে থাকে।

এ অবস্থায়-
১. P অঞ্চল হতে কিছু হোল N অঞ্চলে চলে যাওয়ায় P অঞ্চলের জাংশন-সংলগ্ন এলাকার অণুগুলো আয়নিত হয়ে Negative charge ধারণ করে। ২. একইভাবে N অঞ্চল হতে P অঞ্চলে ইলেক্ট্রনের ব্যাপনের কারণে N অঞ্চলে Positive Charge আয়নিত একটি অঞ্চল তৈরি হয়।
এভাবে P অঞ্চলে Negative ও N অঞ্চলে Positive আয়ন উন্মুক্ত হয়ে যাওয়ায় একটি উল্টো ব্যাপার ঘটে
১. P অঞ্চলের Negative আয়ন, N অঞ্চলের ইলেক্ট্রনকে P অঞ্চলে প্রবেশে বাধা দেয়
২. N অঞ্চলের Positive আয়ন, P অঞ্চলের হতে হোলকে N অঞ্চলে প্রবেশে বাধা দেয়

এই অবস্থায় একটি তাপীয় সাম্যাবস্থা অর্জিত হয়, যাতে ইলেকট্রন ও হোলের ব্যাপন বন্ধ হয়ে যায় এবং জাংশন বা সংযোগস্থলে একটি বিভব প্রাচীর (Potential Barrier) সৃষ্টি হয়। এই বিভব প্রাচীরের উভয় পাশে একটি সীমা পর্যন্ত শুধুমাত্র আয়ন (P অঞ্চলে Negative আয়ন এবং N অঞ্চলে Positive আয়ন) থাকে, এই সীমার মধ্যে কোন মুক্ত ইলেক্ট্রন বা হোল থাকেনা। এই স্তরে আধানবাহকের অনুপস্থিতির কারণে একে ডিপলেশন স্তর (Depletion Region) বলে।

ডায়োডের কার্যপ্রণালী

একটি ডায়োডে তড়িৎ প্রবাহ হবে কিনা তা নির্ভর করে এর উপর প্রযুক্ত ভোল্টেজের (Voltage) উপর যা দুইভাবে হতে পারে-
১. সম্মুখী ঝোঁক (Forward Bias)
২. বিমুখী ঝোঁক (Reverse Bias)

সম্মুখী ঝোঁক (Forward bias)

বহিঃস্থ ভোল্টেজ যদি এমনভাবে প্রয়োগ করা হয় যে, তড়িৎ-উৎসের (ব্যাটারী) Positive প্রান্ত ডায়োডের P প্রান্তের সাথে এবং তড়িৎ-উৎসের ঋণাত্মক প্রান্ত ডায়োডের N প্রান্তের সাথে যুক্ত থাকে তবে তাকে সম্মুখী ঝোঁক (Forward Bias) বলা হয়। এক্ষেত্রে ব্যাটারীর Positive প্রান্ত-
১. N অঞ্চলের ইলেক্ট্রন গুলোকে P অঞ্চলের দিকে টানবে (কারণ ইলেক্ট্রনের চার্জ এবং ব্যাটারীর Positive প্রান্তের চার্জ বিপরীত)
২. P অঞ্চলের হোলগুলোকে N অঞ্চলের দিকে ঠেলে দিবে (কারণ হোলের চার্জ এবং ব্যাটারীর Positive প্রান্তের চার্জ সমপ্রকৃতির)

এবং ব্যাটারীর Negative প্রান্ত-
১. N অঞ্চলের ইলেক্ট্রন গুলোকে P অঞ্চলের দিকে ঠেলে দিবে (কারণ ইলেক্ট্রনের চার্জ এবং ব্যাটারীর Negative প্রান্তের চার্জ সমপ্রকৃতির)
২. P অঞ্চলের হোলগুলোকে N অঞ্চলের দিকে টানবে (কারণ হোলের চার্জ এবং ব্যাটারীর Negative প্রান্তের চার্জ বিপরীত)

ফলে ভোল্টেজ বাড়াতে থাকলে ডিপলেশন স্তর সংকুচিত হতে থাকবে (যেহেতু আধান বাহকের চাপ বৃদ্ধি পাচ্ছে) এবং এক পর্যায়ে ডিপলেশন স্তর উপেক্ষা করে আধান বাহকগুলো জংশন অতিক্রম করবে। যেহেতু P অঞ্চল হতে হোল N অঞ্চলে প্রবেশ করছে এবং N অঞ্চল হতে ইলেক্ট্রন P অঞ্চলে প্রবেশ করছে সেহেতু এটা বলা যায় ডায়োডের মধ্য দিয়ে তড়িৎ/বিদ্যুৎ প্রবাহিত হচ্ছে। ব্যাটারীর উপস্থিতির কারণে এই প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকবে এবং বর্তনীতে তড়িৎ প্রবাহ চলতে থাকবে।

বিমুখী ঝোঁক (Reverse bias)

Reverse-bias

বহিঃস্থ ভোল্টেজ যদি এমনভাবে প্রয়োগ করা হয় যে, তড়িৎ-উৎসের (ব্যাটারী) ঋণাত্মক প্রান্ত ডায়োডের P প্রান্তের সাথে এবং তড়িৎ-উৎসের Positive প্রান্ত ডায়োডের N প্রান্তের সাথে যুক্ত থাকে তবে তাকে বিমুখী ঝোঁক (Reverse Bias) বলা হয়।

এক্ষেত্রে ব্যাটারীর Negative প্রান্ত-
১. N অঞ্চলের ইলেক্ট্রন গুলোকে জংশন থেকে N অঞ্চলের দিকে ঠেলে দিবে (কারণ ইলেক্ট্রনের চার্জ এবং ব্যাটারীর Negative প্রান্তের চার্জ সমপ্রকৃতির)
২. P অঞ্চলের হোলগুলোকে জংশন থেকে P অঞ্চলের আরো প্রান্তের দিকে টেনে আনবে (কারণ হোলের

চার্জ এবং ব্যাটারীর Negative প্রান্তের চার্জ বিপরীত)


এবং ব্যাটারীর Positive প্রান্ত-
১. N অঞ্চলের ইলেক্ট্রনগুলোকে জংশন থেকে N অঞ্চলের আরো প্রান্তের দিকে টেনে আনবে (কারণ ইলেক্ট্রনের চার্জ এবং ব্যাটারীর Positive প্রান্তের চার্জ বিপরীত)
২. P অঞ্চলের হোলগুলোকে জংশন থেকে P অঞ্চলের দিকে ঠেলে দিবে (কারণ হোলের চার্জ এবং ব্যাটারীর Positive প্রান্তের চার্জ সমপ্রকৃতির)


এইক্ষেত্রে Voltage বাড়াতে থাকলে ডিপলেশন স্তর সম্প্রসারিত হতে থাকবে (যেহেতু আধান বাহকের চাপ কমে যাচ্ছে); নির্দিষ্ট সীমার অতিরিক্ত Voltage প্রয়োগ করলে আয়োনাইজেশন বা টানেলিং প্রক্রিয়ায় ডায়োডের মধ্য দিয়ে তড়িৎ-প্রবাহ হতে থাকে। এই Voltage কে ব্রেকডাউন Voltage বলে। এর ফলে ডায়োডের পদার্থগত কোন ক্ষতি বা পরিবর্তন ঘটে না, শুধুমাত্র এর বিপরীতমুখী (N থেকে P অঞ্চলের দিকে) তড়িৎ-প্রবাহ রোধের ক্ষমতা লোপ পায়। বিভব পার্থক্য ব্রেকডাউন ভোল্টেজের নিচে নেমে এলে ডায়োড পুনরায় তার একমুখী তড়িৎ পরিবহনের ক্ষমতা (রেকটিফিকেশন)ফেরত পায়। তবে উচ্চ বিভব পার্থক্যে উচ্চ তড়িৎ প্রবাহ ডায়োডে উচ্চ তাপমাত্রা তৈরি করে যা একটি নির্দিষ্ট সীমা অতিক্রম করলে ডায়োডটি পুড়ে যেতে পারে।

এর পরবর্তী পোস্টে আমরা ডায়োড এর প্রকারভেদ সম্বন্ধে আলোচনা করব:

আমাদের পূর্বের পোস্ট গুলি পড়তে আপনি নিচের লিংক এ ক্লিক করুন:

 1. ভোল্টেজ(Voltage) কী?ভোল্টেজ(Voltage) এবং কারেন্ট মধ্যে পার্থক্য


 2. 
কারেন্ট কি ?What is Electric Current? in Bengali


3. AC ও DC মধ্যে প্রার্থক্য।


4. 
তড়িৎ প্রবাহের উৎপত্তি


5পারমাণবিক গঠন

6. ব্যাটারি কী? বিদ্যুতিক সেল কী? ব্যাটারীর ইতিহাস ও প্রকার

7.ওহমের সূত্র

8. একটিভ কম্পোনেন্ট ও প্যাসিভ কম্পোনেন্ট এর মধ্যে পার্থক্য

যদি আপনার এই পোস্ট টি ভালো লাগে তাহলে অবশ্যই আপনাদের বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন|এছাড়াও আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা পরামর্শ থাকলে কমেন্ট বক্স এ অবশ্যই জানাবেন।

20 thoughts on “ডায়োড কি?|ইতিহাস | কার্যপ্রণালী |Forward bias | Reverse bias”

  1. Hey there! I just want to offer you a huge thumbs up for the great info you have right here on this post. I am returning to your blog for more soon. Effie Fidel Cass

    Reply
  2. Howdy would you mind letting me know which webhost you’re working with?
    I’ve loaded your blog in 3 completely different web browsers and
    I must say this blog loads a lot quicker then most.
    Can you recommend a good web hosting provider at a fair price?

    Thanks a lot, I appreciate it!

    Reply
  3. I don’t even know how I ended up here, but I thought this
    post was great. I don’t know who you are but certainly you’re going
    to a famous blogger if you are not already 😉 Cheers!

    Reply
  4. The next time I read a blog, Hopefully it doesn’t disappoint
    me just as much as this particular one. After
    all, I know it was my choice to read through, however I really believed you would probably have something interesting to say.
    All I hear is a bunch of complaining about something you
    could possibly fix if you were not too busy looking for attention.

    Reply

Leave a Comment

error: Content is protected !!