তড়িৎ প্রবাহের উৎপত্তি-Origin of electric current in Bengali

তড়িৎ প্রবাহের উৎপত্তি :

মানবসভ্যতায় যুগান্তর সৃষ্টিকারী বিদ্যুৎবা তড়িৎসম্বন্ধে আমরা সবাই পরিচিত । শক্তির এই রূপটি অস্তিত্ব জগৎ সৃষ্টির আদি থেকে থাকলেও তার প্রকৃতি বা সৃষ্টি রহস্য সম্বন্ধে ধারণা বহুদিন পর্যন্ত মানুষের অজানা থেকে গিয়েছিল।

প্রায় 600 খ্রিস্টপূর্বাব্দে গ্রিক দার্শনিক থেলেস ( Thales ) লক্ষ করেন যে অ্যাম্বারকে ( একপ্রকার রজন গাছের আঠা ) পশম দিয়ে ঘর্ষণ করলে ওই অ্যাম্বারে এমন একটি শক্তি জন্মায় যার দ্বারা সেটি শােলার ছােটো টুকরাে , কর্কের টুকরাে , পাখির পালক প্রভৃতি হালকা বস্তুকে আকর্ষণ করতে পারে । এর বহু পরে , প্রায় 1600 খ্রিস্টাব্দে ভূ – চৌম্বকত্ব সম্বন্ধে তত্ত্ব প্রদানকারী ডা . গিলবার্ট এ সম্বন্ধে বিস্তারিত পরীক্ষা – নিরীক্ষা করে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে অনেক পদার্থই ঘর্ষণের ফলে আকর্ষণ ক্ষমতা লাভ করে । গ্রিক ভাষায় অ্যাম্বারকে বলে ইলেকট্রন ( Electron )

সেই অনুসারে এই ঘটনাকে ডা . গিলবার্ট নাম দেন ইলেকট্রিফিকেশন ( Electrification ) এবং ঘর্ষণের ফলে পদার্থের মধ্যে উদ্ভূত রহস্যময় আকর্ষণী শক্তিকে তিনি নাম দেন ইলেকট্রিসিটি ( Electricity ) যা আমরা বর্তমানে তড়িৎ বা বিদ্যুৎ নামে চিনি । তড়িৎ দুই প্রকার ( 1 ) স্থির তড়িৎ ( Statical Electricity ) ( 2 ) প্রবাহী বা চল তড়িৎ ( Current Electricity ) এই অধ্যায়ে আমাদের আলােচ্য বিষয় — প্রবাহী বা চল তড়িৎ ( Current Electricity )

প্রবাহী বা চল তড়িৎ ( Current Electricity )

আজকের যাবতীয় ভােগ্যদ্রব্য টিভি , ফ্রিজ , টেলিফোন , রেডিও , বৈদ্যুতিক আলাে , পাখা , শীতাতপ নিয়ন্ত্রক যন্ত্র – সবই বিদ্যুতের দান । শিল্পের অগ্রগতির মূলেও বিদ্যুৎ । কোটি – কোটি জলকণা কোনাে একদিকে ছুটে চললে সৃষ্টি হয় জলপ্রবাহের । অনুরূপ বায়ুর একথান থেকে অন্যস্থানে ছুটে যাওয়ায় সৃষ্টি হয় বায়ুপ্রবাহের । সেই প্রকার অসংখ্য তড়িৎবাহী কণা ইলেকট্রন অথবা আয়ন (Electron) কোনাে কারণে যখন কোনাে নির্দিষ্ট দিকে চলতে শুরু করে তখন সৃষ্টি হয় তড়িৎপ্রবাহের । তড়িৎপ্রবাহের জন্য প্রয়ােজন উপযুক্ত মাধ্যম । যাকে আমরা পরিবাহী বলি । যে তড়িৎ কোনাে পরিবাহীর মধ্য দিয়ে নির্দিষ্ট দিকে প্রবাহিত হয় তাকেই আমরা প্রবাহী তড়িৎ বা চল তড়িৎ বলি ।

তড়িৎ প্রবাহ ( Electric current) : কোনাে পরিবাহীর মধ্যে দিয়ে তড়িৎ চলাচল করলে ওই পরিবাহীতে তড়িৎ প্রবাহ ঘটে । আবার এক সেকেন্ডে পরিবাহীর ভিতর দিয়ে মােট যে তড়িৎ প্রবাহিত হয় তাকে বলে প্রবাহমাত্রা । প্রবাহমাত্রা : কোনাে তড়িৎ পরিবাহীর মধ্যে দিয়ে প্রতি সেকেন্ডে যে পরিমাণ তড়িৎ প্রবাহিত হয় তাকে তড়িৎপ্রবাহ মাত্রা বলে । প্রবাহমাত্রার একক অ্যাম্পিয়ার এবং তড়িৎ পরিমাণের একক কুলম্ব। 1 অ্যাম্পিয়ার = 1 কুলম্ব : 1 সেকেন্ড ।তড়িৎ প্রবাহ দু’রকমের হয় । (1)সমপ্রবাহ(DC) (2)পরিবর্তী প্রবাহ(AC)

সমপ্রবাহ ( Direct Current ) : কোনাে পরিবাহীর ভিতর দিয়ে একই অভিমুখে তড়িৎ প্রবাহিত হলে সেই তড়িৎপ্রবাহকে সমপ্রবাহ বা D.C বলে । তড়িৎ – কোষ ও ব্যাটারি সর্বদা সমপ্রবাহ দেয়।

পরিবর্তী প্রবাহ ( Alternating Current ) : কোনাে পরিবাহীর মধ্যে প্রবাহিত তড়িৎপ্রবাহের অভিমুখ যদি নির্দিষ্ট সময় পরপর বদলে যায় , অর্থাৎ বিপরীতমুখী হয় তবে ওইতড়িৎপ্রবাহকে পরিবর্তী প্রবাহ বা AC বলে।

ইলেকট্রিক প্রবাহ কে একটু ভালো করে বোঝার জন্য বলে রাখি,আমাদের বাড়ির লাইন এর তড়িৎ প্রবাহ পরিবর্তী প্রবাহ(AC)।শুধু উপযুক্ত মাধ্যম (কন্ডাক্ট মেট্রিয়াল ) থাকলেই তড়িৎএক স্থান থেকে অন্য স্থান এ প্রবাহিত হবে না।পরিবাহীর মধ্যে অসংখ্যা ইলেক্ট্রন(Electron) এদিক সেদিক ছুটে বেড়াচ্ছে তাদের এক মুখী করতে প্রয়োজন একটি চালক বল(driving force)।জল প্রবাহের ক্ষেত্রে আমরা দেখি যে জল উচ্চতর স্থান থেকে নিম্নতর স্থানে প্রবাহিত হয়।এটা ঠিক ততক্ষন প্রবাহিত হবে যতক্ষণ প্রবাহের দুটি তল সমান না হয় এর থেকে আমরা বুঝতে পারি চালক বল হলো জলের তলদেশ (মাটি ,পাইপ)। একই ভাবে তড়িৎ প্রবাহের ক্ষত্রে সব সময় উচ্চাবিভব (+ve) থেকে নিম্নবিভব (-ve)এর দিকে ছুটে যাই ততক্ষন তড়িৎ প্রবাহ চলতে থাকে যতক্ষণ পর্যন্ত বিভব দুটি সমান না হচ্ছে।তড়িৎ প্রবাহের মধ্যে চালক বল হলো তড়িৎ বিভব (Electric potential)এর একক ভােন্ট ( Volt )।এর পর আমরা একটু তড়িৎ বিভব সম্পর্কে জানি।

তড়িৎ বিভব (Electric potential) : এক কথায় বলতে পারি তড়িৎ বিভব মানে তড়িৎগ্রস্ত বস্তুর এমন এক অবস্থা কে যে নির্দেশ করে সে কোনো বস্তু কে তড়িৎনেবে না তার থেকে তড়িৎ দেবে। তড়িৎ বিভব দুপ্রকার ( 1 ) উচ্চবিভব বা ধনাত্মক বিভব (+ve) ( ii ) নিম্নবিভব বা ঋণাত্মক বিভব(-ve)

( i ) উচ্চবিভব : ধনাত্মক (+ve)তড়িদাহিত বস্তু যে তড়িদাবস্থার জন্য নিজের ধনাত্মক তড়িদাধান পরিবাহীর মাধ্যমে অপর বস্তুতে সঞ্চালিত করে তাকে উচ্চবিভব বা ধনাত্মক বিভব বলে ।

( ii ) নিম্নবিভব : ঋণাত্মক (-ve) তড়িদগ্রস্ত বস্তু যে শক্তির প্রভাবে অন্য কোনাে ধনাত্মকতড়িৎগ্রস্ত বস্তুর তড়িৎ সংগ্রহ করে নিজে তড়িৎশূন্য হওয়া চেষ্টা করে , সেই শক্তিকে ঋণাত্মক বিভব বা নিম্নবিভব বলে ।

আমরা জানি ধনাত্মক বা পজিটিভ তড়িদগ্রস্ত বস্তুতে ইলেকট্রন কম থাকে এবং ঋণাত্মক বা নেগেটিভ তড়িৎগ্রস্ত বস্তুতে ইলেকট্রন বেশি থাকে। এখন একটি পজিটিভ তড়িৎগ্রস্ত বস্তুর সঙ্গে একটি নেগেটিভ তড়িৎগ্রস্ত বস্তুকে কোনাে পরিবাহী তার দিয়ে যােগ করলে প্রথমে পরিবাহী তারের মুক্ত ইলেকট্রনগুলি পজিটিভ তড়িৎগ্রস্ত বস্তুর টানে চলে যায় । পরে তাদের শূন্যস্থান পূরণ করার জন্য নেগেটিভ তড়িদগ্রস্ত বস্তুর বাড়তি ইলেকট্রনগুলি ছুটে আসে । এইভাবে পরিবাহী তারের মাধ্যমে নেগেটিভ ( – ) তড়িদাধানযুক্ত বস্তু থেকে পজিটিভ ( + ) তড়িদাধানযুক্ত বস্তুতে ইলেকট্রনের প্রবাহ চলতে থাকে |যতক্ষণ না দুটি বস্তুর তাড়িতিক অবস্থা সমান হয় । কিন্তু আগেই বলেছি তড়িৎ প্রবাহ উচ্চ বিভব থেকে নিম্ন বিভবের দিকে ঘটে । তাই ধরে নেওয়া হয় যে কোনাে পরিবাহীর মধ্য দিয়ে ইলেকট্রন বা ঋণাত্মক আধানযুক্ত কণিকা ( অ্যানায়ন ) যে অভিমুখে চলাচল করে , তার বিপরীত অভিমুখে তড়িৎ প্রবাহ ঘটে । অর্থাৎ ইলেকট্রনের প্রবাহের অভিমুখ এবং তড়িৎ প্রবাহের অভিমুখ পরস্পরের বিপরীত ।

আমাদের পূর্বের পোস্ট গুলি পড়তে আপনি নিচের লিংক এ ক্লিক করুন:

 1. ভোল্টেজ কী?ভোল্টেজ এবং কারেন্ট মধ্যে পার্থক্য


 2. 
কারেন্ট কি ?What is Electric Current? in Bengali


3. 
ব্যাটারি কী? বিদ্যুতিক সেল কী? ব্যাটারীর ইতিহাস ও প্রকার


4. 
তড়িৎ প্রবাহের উৎপত্তি


5পারমাণবিক গঠন


হ্যালো বন্ধুরা, এই পোস্টে আমরা আপনাকে তড়িৎ প্রবাহের উৎপত্তি( Origin of electric current) |তড়িৎ প্রবাহ ( Electric Current)|সমপ্রবাহ ( Direct Current)| পরিবর্তী প্রবাহ ( Alternating Current ) | তড়িৎ বিভব (Electric potential) গুলি আপনাদের বোঝানোর চেষ্টা করেছি| যদি আপনার এই পোস্ট টি ভালো লাগে তাহলে অবশ্যই আপনাদের বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন|এছাড়াও আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা পরামর্শ থাকলে কমেন্ট বক্স এ অবশ্যই জানাবেন | আপনাকে অসংখ ধন্যবাদ মনোযোগ সহকারে এই পোস্ট টি পড়ার জন্য|

7 thoughts on “তড়িৎ প্রবাহের উৎপত্তি-Origin of electric current in Bengali”

  1. খুব সুন্দর সরল ভাষায় লেখা ,সব কিছুই বোজা যাচ্ছে ,এই ভাবে আরো ভালো ভালো পোস্ট পেলে আমরা উপকৃত হবো

    Reply
  2. Pretty component to content. I simply stumbled upon your weblog and in accession capital to assert that I get in fact loved
    account your blog posts. Any way I’ll be subscribing to your feeds and even I achievement you access constantly rapidly.

    Reply
  3. I was just looking for this information for some time. After six hours of continuous Googleing, finally I got it in your website. I wonder what is the lack of Google strategy that do not rank this type of informative sites in top of the list. Normally the top sites are full of garbage. Georgie Salim Doolittle

    Reply

Leave a Comment

error: Content is protected !!